সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার, উখিয়া নিউজ ডটকম।
প্রকাশিত: ০৪/০৪/২০২৪ ১০:০০ এএম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই নতুন করে উখিয়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। চলছে সম্ভাব্য ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা। চলছে ভোটের হিসাব নিকাশ। প্রার্থীদের সুযোগ- সুবিধা কিংবা অযোগ্যতা নিয়েও চলছে চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ।

এদিকে, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রাজনীতির ম্যার-প্যাঁচ, ভোট ব্যাংক, প্রার্থীর ইমেজ ও অতীত কর্মকাণ্ড। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্ভাব্য ৪ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর পথের কাঁটা হতে পারেন জামায়াত ইসলামী সমর্থিত প্রার্থী!
পাশাপাশি রয়েছে উখিয়া-টেকনাফের ভোটের ম্যাজিকম্যান ও দানবীর খ্যাত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির সমর্থিত বা মনোনীত প্রার্থী কে হচ্ছেন সেটাও রয়েছে ভোটারদের মুখে মুখে।

অতীত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি যে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন সেই প্রার্থীই শেষ পর্যন্ত বিজয়ের মালা পড়েছেন। সেটা হোক সংসদ নির্বাচন, সেটা হোক উপজেলা পরিষদের নির্বাচন, সেটা হোক ইউপি নির্বাচন বা সেটা অন্য যে কোন নির্বাচনই। এবারও উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এর ব্যতিক্রম হবে না বলে স্থানীয় সচেতন মহলের ধারণা।

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের নিয়ে।

আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ চৌধুরী।

মহিলা ভাইস প্রার্থী হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, উখিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুনেচ্ছা বেবি, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিন আক্তার, জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ফরিদা ইয়াসমিন ও মরিচ্যার সানজিদা আক্তার মায়া।

পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছেন, তারা হলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম জাহাঙ্গীর আলম, হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন চৌধুরী মিন্টু, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামী আমীর মাওলানা আবুল ফজল ও উখিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক গফুর মিয়া চৌধুরী।

এম জাহাঙ্গীর আলম একজন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তান। তিনি গতবার নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে। এবারও সেই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য জাহাঙ্গীর আলম জোর চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার চাচা শফিউল আলম সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বোচ্চ পদ কেবিনেট সচিব পদে থেকে দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় পালন করেছেন অত্যন্ত সুনামের সাথে। তার পরিবারের অপর সদস্য এটিএম জাফর আলম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের প্রথম শহীদ। অপর চাচা অধ্যক্ষ শাহ আলম ছিলেন উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তার শ্বশুর নুরুল আমিন চৌধুরী হচ্ছেন জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় সাবেক চেয়ারম্যান। এলাকায় নুরুল আমিন চৌধুরীর বিশাল একটা ভোট ব্যাংক রয়েছে, যেই ভোট দিয়ে ক্ষেত্রে বিশেষে একজন প্রার্থীর জয় পরাজয়ও নিশ্চিত করা যায়। সব মিলিয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলার চেয়ারম্যান এম জাহাঙ্গীর আলম ভালোই সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। তাছাড়া তিনি ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে এলাকার বেশ উন্নয়ন করেছেন।

এবারের নির্বাচনে সব চেয়ে বড় চমক হিসাবে দেখা দিয়েছেন কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল চৌধুরী। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে জড়িত, পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয়,আঞ্চলিক ও স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানের তিনি মানবজমিন পত্রিকার কক্সবাজারস্থ স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। পরোপকারী হিসেবে তিনি বেশ সুনাম অর্জন করেছেন এলাকায়। তাছাড়া স্থানীয় এক প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তাই আলোচিত – সমালোচিত ঐপরিবারের এন্ট্রি ভোট ব্যাংক পুরোটা রাসেল চৌধুরীর দখলে থাকবে বলে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন। সেই ক্ষেত্রে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাংবাদিক রাসেল চৌধুরী সকলকে অবাক করে ভোটের মাঠে চমক ও গণজোয়ার দেখিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদের বিজয়ের মালা নিজের করে নেওয়া সম্ভাবনা বেশি বলে এলাকার বেশি ভাগ সাধারণ ভোটাররাই মনে করেন। উখিয়া প্রেস ক্লাবের আজীবন (দাতা) সদস্য রাসেল চৌধুরী বিভিন্ন সামাজিক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনেও রয়েছে তার ব্যাপক আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ।

হলদিয়া পালং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মিন্টুও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হিসাবে বর্তমানে দায়িত্বরত আছেন। সাধারণ মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকায় তার অন্যতম যোগ্যতা। হলদিয়া পালং ইউনিয়নের নির্বাচন হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি মোটামুটি সফল ছিলেন। দায়িত্বশীল সুত্রে জানা গেছে, তার এবারের নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়াতে পারে তার ঘনিষ্ঠজনরাই!

উখিয়া উপজেলা জামায়াত ইসলামী আমীর জেলার অন্যতম আলোড়ন সৃষ্টিকারী ধর্মীয় বক্তা মাওলানা আবুল ফজলও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার কথা অসমর্থিত সুত্রে জানা গেছে। মাওলানা আবুল ফজল সর্বজন গ্রহণ যোগ্য একজন আলেম ও সুবক্তা। তিনি উপজেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজাপালং ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক। শেষ মুহূর্তে তিনি যদি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে তাহলে অন্য প্রার্থীদের ঘুম হারাম হয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আবুল ফজল অন্য প্রার্থীদের সামনে একটি বঙ্গোপসাগর হয়ে দাড়াবে। যে সাগর পাড়ি দেওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পক্ষে কঠিন হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিজ্ঞজনরা।

উখিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি গফুর মিয়া চৌধুরী নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন অংশ গ্রহণ করার লক্ষ্যে গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। মসজিদ গুলোতে উপস্থিত হয়ে মুসল্লীদের দোয়া গ্রহণ করা থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ। স্পষ্টবাদী, আপোষহীন এবং প্রতিবাদী একজন সাংবাদিক হিসাবে সর্বমহলে গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে তার। ইতি মধ্যেই তার পক্ষে এসএসসি ৯৪ ব্যাচ সহ বিভিন্ন ফোরাম মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।

রাজনৈতিক বিজ্ঞজনদের মতে বিএনপি নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, না করার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। আগামীর ভাইস চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন সেটা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে উখিয়াবাসীকে। তবে এখন থেকেই ভোটের মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

বিএনপি বা জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলে সেক্ষেত্রে সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর পরিবারের সমর্থনও প্রার্থীদের জন্য বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিবে ভোটের মাঠে। ঝানু রাজনীতিবিদ শাহজাহান চৌধুরীর ইশারায় এখনও অনেক কিছু হতে পারে সেটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন তার দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীরা।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’, মৃত্যু কমলেও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলো ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে। শীত মৌসুমেও এই দুই উপজেলার ...

ক্যাম্পের অভ্যন্তরে দুর্বল চেকপোস্ট :গাইবান্ধায় গিয়ে রোহিঙ্গা যুবকসহ গ্রেফতার ৩

গাইবান্ধায় ভোটার হতে এসে রোহিঙ্গা যুবকসহ আটক ৩ গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভোটার নিবন্ধন ...